পালি উচ্চারণ প্রণালী - Pali Pronunciation
পালি ভাষা স্বয়ং ভগবান বুদ্ধের মুখে ব্যবহৃত ভাষা। তাই এ ভাষা শিক্ষা ও উচ্চারণে অন্তরে গভীর শ্রদ্ধাভাব জাগ্রত রাখা একান্ত কর্তব্য। কারো নাম বিকৃত ভাবে উচ্চারণ যেমন দোাষনীয় অপরাধ, অনুরূপভাবে পালি ভাষায় শিক্ষা ও উচ্চারণ অশুদ্ধ হওয়া অত্যন্ত গর্হিত এবং পাপের মধ্যেই গণ্য হয়। অধিকন্তু অশুদ্ধ উচ্চারণের কারণে সুত্ত পরিত্রাণাদিসহ ভিক্ষুদের বিনয় কর্মবাক্যের বিশুদ্ধিতা নষ্ট হয়, এদের গুণধর্মও নষ্ট হয়। তাই অতি সাবধানে অত্যন্ত নিঁখুত ও বিশুদ্ধভাবেই পালি ভাষার শিক্ষা ও উচ্চারণ প্রণালী শিক্ষা করা একান্ত কর্তব্য।
Phonetics তথা
ধ্বনিতাত্ত্বিকি গবেষণায় দেখা গেছে সংস্কৃত
বর্ণমালার স্বর ব্যঞ্জন সমূহের
বিভাজন ও উচ্চরণ প্রণালী
অবৈজ্ঞানিক। বর্তমান বাংলা ভাষার জননী পালি ভাষা
হলেও পরবর্তীকালে তাহা সংস্কৃত ভাষা
প্রভাবিত শিক্ষার কারণে ধ্বনিতাত্ত্বিকি বিধান লঙ্ঘিত উচ্চারণের শিকার হয়ে পড়েছে। বাংলা
ভাষাভাষী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান
পালি পন্ডিতগণ এই বিভ্রান্তির শিকার
হয়েই পালি ভাষাকে সংস্কত
নিয়মে ভুল উচ্চারণ শিক্ষা
দিয়ে থাকেন। এটা মন্ত বড়
অন্যায় ও পাপ।
যেমন ধরুন, বাংলা স্বরবর্ণমালা শিক্ষায় যদি এভাবে উচ্চারণ করা হয়- স্বরে অ; স্বরে আ; এজাতীয় উচ্চারণ ধ্বনিতাত্ত্বিকি নিয়মে একান্তই ভুল। এদের প্রকৃত উচ্চারণ হবে-হ্রস্ব আ, দীর্ঘ আ। যেমন বলা হয় হ্রস্ব-ই, দীর্ঘ-ই, হ্রস্ব-উ, দীর্ঘ-উ। এটাই ধ্বনিতাত্তিক নিয়ম এবং শুদ্ধ উচ্চারণ। পালি বর্ণমালা সমূহ এই নিয়ম মেনে চলার কারণেই এদের স্বরবর্ণের সর্বমোট সংখ্যা দাড়িয়েছে মাত্র ৮টি; যথা হ্রস্ব আ, দীর্ঘ আ, হ্রস্ব-ই, দীর্ঘ-ই, হ্রস্ব-উ, দীর্ঘ-উ, এ, ও ইত্যাদি । বাংলা স্বরবর্ণের- ঔ (অ+উ), ঐ (অ+ই), এই দ্বিস্বরদ্বয় এবং ঋ (র+ই) এই স্বরব্যঞ্জন বর্ণটি বাংলা ভাষায় অপ্রচলিত ৯(রী) বর্ণটি পালিতে ধ্বণিতাত্ত্বিকি নিয়মে অপ্রয়োজনীয় বিধায় বাদ পড়েছে। বাংলা বর্ণমালায় এ সকল বর্ণের অন্তর্ভুক্তি একান্তই অবেজ্ঞানিক এবং সংস্কৃত প্রভাবিত।
আমরা
জানি যে, ব্যঞ্জনবর্ণ স্বরবর্ণের
সাহায্য নিয়েই উচ্চারিত হয়। আর সেই
স্বরবর্ণটি হচ্ছে- স্বরবর্ণমালার প্রথম বর্ণ হ্রস্ব-আ।
বাংলা বর্ণমালা সংস্কৃত বর্ণমালার চেহারায় লিখিত হওয়ার কারণেই বাংলায় লিখিত ব্যঞ্জনবর্ণসমূহে উক্ত স্বরবর্ণটি লুপ্ত
অবস্থায় চলে গেছে। যেমন-ক, গ, চ
ইত্যাদি। অথচ উচ্চারণকালে আমরা
বলে থাকি- ক+অ= ক,
গ+অ=গ। ইংরেজী
বর্ণমালায় কিন্তু এমন বিভ্রান্তি নেই।
যেমন- Ka, Ga, Ca- ইত্যাদি। নিম্নে বর্ণিত ধ্বনিতাত্ত্বিক এবং বৈজ্ঞানিক নিয়মে পালি বর্ণমালার বিশুদ্ধ
উচ্চারণ ও বানান পদ্ধতি
তাই অত্যন্ত বিশুদ্ধ নির্ভুল বলেই প্রমাণিত। আর
একারণেই পালি স্বরবর্ণ ও
ব্যঞ্জনবর্ণসমূহ উচ্চারিত হতে হবে নিন্মোক্ত
প্রণালীতে-
একইভাবে
বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণমালায় বর্গীয়- ব, ba- ওষ্ঠজ বর্গীয় ব.-bh-ভ, V-দন্ত ওষ্ঠজ
অবর্গীয় ব-এই বর্ণসমূহ
পৃথকভাবে লিখা যায়।
সংস্কৃতের
প্রভাবে বাংলার ব্যঞ্জনবর্ণ সমূহে শ, ষ, স- এই
৩টি স- বর্ণ বিদ্যমান
আছে। ধ্বনিতাত্ত্বিকি নিয়মে বস্তুত শুধু স বর্ণটি
দিয়েই অপর দুইটির অভাব
মেটানো যায়। তাই পালি ব্যঞ্জন বর্ণর্মালায় এই একটি মাত্র
স-এর অস্থিত্বই কেবল
বিদ্যমান আছে।
স্বরবর্ণ উচ্চারণ পরিচিতি (সংক্ষিপ্ত)
১. পালিতে
স্বরবর্ণ মোট ৮টি। এদের
মধ্যে অ (হস্ব-আ)
ই, উ, এই ৩টি
বর্ণকে বলা হয় হ্স্ব
স্বর। এগুলার উচ্চারণ তাই যত সংক্ষিপ্ত
সময়ে সম্তব "দ্রুত উচ্চারণ করতে হয়। চোখের
পলক একবার পড়তে যত সময় লাগে
ততক্ষণ উচ্চারণ করতে হয়।
২. আ
(দীর্ঘ- আ), ঈ, উ,
এ, ও- এই ৫টি
বর্ণক বলা হয় দীর্ঘ
স্বর। এগুলোকে যতবেশী পারা যায় সময়
দিয়ে উচ্চারণ করা যায়। অর্থাৎ
টেনে উচ্চারণ করতে হয়। চোখের
পলক দুইবার পড়তে যত সময় লাগে
তত্ক্ষণ উচ্চারণ করতে হয়।
৩. পালি
স্বরবর্ণ- অ টি ব্যঞ্জনবর্ণের
সাথে মিশ্রিত হলে "অ" হয়ে যায় হ্রস্ব
"আ", যেমন- ক+অ= হ্রস্ব
কা, ক+ আ (দীর্ঘ-আ)= কা (দীর্ঘ-কা), ক্+ ি (ই)= কি,
ক+ী (ঈ)= কী, ক+ু (হ্রস্ব-উ)= কু, ক+ূ (দীর্ঘ উ/ঊ) = কূ,
ক+ ে (দীর্ঘ-এ) = কে, ক্+ ো (দীর্ঘ-ও) = কো।
৪. তবে
দীর্ঘ স্বরের এ, ও এই
দুইবর্ণ বা এদের চিহ্ন
, সমৃহ যুক্ত ব্যঞ্জণবর্ণের পৃর্বে থাকলে উক্ত দীর্ঘস্বর হ্রস্বাকারে
উচ্চারিত হয়। যেমন- ওক্খমতি,
মেত্তং, সেট্ঠং ইত্যাদি।
পালি ব্যঙ্গণবর্ণ উচ্চারণ পরিচিতি (সংক্ষিপ্ত)
১. পালি
ব্যঙ্গনবর্ণের সংখ্যা ৩৩টি। তন্মধ্যে ক হতে ম
পর্যন্ত মোট ২৫টি ব্যঞ্জনবর্ণকে
বলা হয় বর্গীয় বর্ণ।
এদের প্রত্যেক ৫টি বর্ণকে ৫টি
বর্গে বিভক্ত করে প্রত্যেক বর্গের
১ম অক্ষর দ্বারা নামকরণ করা হয়। যেমন-
ক-বর্গ : ক, খ, গ,
ঘ, ও ইত্যাদি।
২. প্রত্যেক
বর্গের প্রথম ও তৃতীয় বর্ণকে
বলা হয় "অঘোষ বর্ণ" বা অল্প প্রাণ।
যেমন- ক-গ, চ-জ, ট-ড,
ত-দ, প-ব।
এ সকল বর্ণের উচ্চারণে
কোন প্রকার জোর না দিয়
কেবল মুখ গহ্বরের বিভিন্ন
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা উচ্চারণ করলেই চলে।
৩. কিন্তু
প্রত্যক বর্গের ২য় ও ৪র্থ
বর্ণসমূহ উচ্চারণ করতে হয় প্রচুর
শ্বাসাঘাত ও কণ্ঠনালীর প্রয়োগ
দ্বারা। তাই এদের বলা
হয় "ঘোষ বর্ণ" বা
মহাপ্রাণ। যেমন- খ-ঘ, ছু-ঝ, ঠ-ঢ,
থ-ধ, এবং ফ-ভ ইত্যাদি
৪. বর্গ
সমূহের অন্তিম বর্ণ, তথা- ও, এ,
ণ, ন, ম সহ
অবগীয় ং- এই ৬টি
বর্ণকে উচ্চারণ কালে নাসিকার সাহায্য
নিতে হয়। তাই এদের
বলা হয় নাসিক্য বা
অনুনাসিক বর্ণ।
৫. পালি
ব্যঞ্জবর্ণমালায় শুধু মাত্র "স"-
বর্ণটির ব্যবহার হয়; শ, ষ-
এ দুটি বর্ণের ব্যবহার
নাই। তাছাড়া অবর্গীয় বর্ণ "ব"- এর উচ্চারণ হয়
দত্ত ওষ্ঠজ বর্ণরূপে এবং বর্গীয় "ব"
এর উচ্চারণ হয় ওষ্ঠজ বর্ণরূপে।
পালি অবর্গীয় "ল" এর উচ্চারণ হয়
কণ্ঠ তালুজরূপ। যেমন- উচ্হ্লা (উছালা)। (ডক্টর মোহাম্মদ
শাহ কোরেশী ও ভদন্ত প্রজ্ঞাবংশ
মহাথের) পালি উচ্চারণ প্রণালী
প্রবন্ধটি প্রজ্ঞাবংশ একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত হস্তসহায়' গ্রস্থ হতে সংকলিত।